মোহাম্মদ আজিজ, ৭১ বছর বয়সী একজন বই বিক্রেতা যিনি মরক্কোর রাবাত মদিনায় ৪৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় আছেন। তবে তার জীবনের গল্প শুধু বই বিক্রি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ছোটবেলায় ছয় বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে কঠিন এক শৈশব পার করেছেন তিনি। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে উচ্চবিদ্যালয় শেষ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিন্তু ১৫ বছর বয়সে পাঠ্যবইয়ের উচ্চমূল্য তার সেই স্বপ্নকে ভেঙে দেয়। হতাশায় তিনি সাহিত্যের আশ্রয়ে যান যেখানে বই তার জন্য জীবনের অর্থ হয়ে ওঠে।
"এভাবেই আমি আমার শৈশব, পরিস্থিতি আর দারিদ্র্যের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছি," আজিজ বলেন। তিনি প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা বই পড়েন এবং জীবনে ৪,০০০ টিরও বেশি বই পড়েছেন। দোকানে সময় দেওয়ার পাশাপাশি রাবাতের আশেপাশে ঘুরে বই বিক্রেতাদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করেন। সেগুলো দোকানে সাজিয়ে রাখেন যেন অন্যরাও জ্ঞানের আলো ছড়াতে পারে। তার দোকানে ট্যাবলয়েড ম্যাগাজিন পাওয়া যায় মাত্র প্রায় ০.৫২ ডলারে আর মেডিক্যাল বই প্রায় ৭৩ ডলারে। কাজের ফাঁকে তিনি শুধু খাওয়া, নামাজ পড়া, ধূমপান আর ক্রেতাদের সাহায্য করার জন্য বিরতি নেন। প্রতিদিন গড়ে এক-দুটি বই বিক্রি হয়, কিন্তু তাতে তার উৎসাহ কমে না।
আজিজ শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের দাম কমিয়ে দেন, কারণ তিনি জানেন দারিদ্র্য আর উচ্চমূল্য কীভাবে শিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তার মতে, ৫০ বছর আগেও এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে মানুষ, এখনও হচ্ছে। মরক্কোর শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি হলেও, এখনও প্রায় ৩ জনে একজন মানুষ নিরক্ষর। আজিজ চান তার দোকান মানুষের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে। তিনি বলেন, "যতদিন সবাই পড়তে না শিখবে, আমি এখানেই থাকব।" রাবাতের মোহাম্মদ ভি অ্যাভিনিউর পুরনো শহরে তার ছোট্ট দোকানটি শুধু বইয়ের দোকান নয়; এটি যেন জ্ঞানের এক ছোট্ট আলোকিত ঘর।
No comments:
Post a Comment