প্রাচীন কোনো বস্তুর বয়স জানা যায় কীভাবে?
আমরা প্রায়শই দেখে থাকি আর্কিওলজিস্টরা বহু বছর পুরনো বস্ত, ফসিল মাটির নিচ থেকে খুঁজে পায়। তারা কীভাবে বুঝতে পারে যে সেটি কত হাজার বছর পুরনো? কোনো বস্তু বা প্রাচীন কোনো জিনিসের বয়স নির্ধারণ বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বয়স নির্ধারণের মাধ্যমে এটি পৃথিবীর গঠনকাল নির্ধারণ, জলবায়ুর পরিবর্তন বোঝা এবং প্রাচীন মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। এই বয়স নির্ধারণের কাজটি বিজ্ঞানীরা সাধারণত রেডিওকার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে করেন। এই পদ্ধতিতে কার্বন-১৪ নামের এক ধরনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ পরিমাপ করা হয়।
কার্বন-১৪ বায়ুমণ্ডলে তৈরি হয় পরে উদ্ভিদ গ্রহণ করে এবং প্রাণীরা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এটিকে ছেড়ে দেয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক ও রেডিওকার্বন ডেটিং বিশেষজ্ঞ থমাস হাইয়াম জানিয়েছেন, জীবিত সব কিছুই এটি গ্রহণ করে। সাধারণ কার্বনের চেয়ে কার্বন-১৪ ভারী ও কম স্থিতিশীল হওয়ায় এটি কয়েক হাজার বছর পর ভেঙে যায় এবং নাইট্রোজেনে পরিণত হয়। যখন কোনো জীব মারা যায়, তখন তাদের শরীরে কার্বন-১৪ গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে এই আইসোটোপ ক্ষয় হতে শুরু করে। বিজ্ঞানীরা জানেন যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্বন-১৪ অর্ধেক ক্ষয় হতে কত সময় লাগে এবং এই সময়কে বলে হাফ-লাইফ। কার্বন-১৪ এর হাফ-লাইফ ৫,৭৩০ বছর। তাই বিজ্ঞানীরা কোনো জৈব বস্তু যেমন পশুর চামড়া, কঙ্কাল, ছাই বা গাছের বয়স নির্ধারণে কার্বন-১৪ ও কার্বন-১২ এর অনুপাত পরিমাপ করেন।
তবে ৫০,০০০ বছরের বেশি পুরোনো বস্তুতে কার্বন-১৪ এতটাই কমে যায় যে সেটি পরিমাপ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন বিজ্ঞানীরা অন্যান্য তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের সাহায্যে বয়স নির্ধারণ করেন। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো বস্তুর বয়স নির্ধারণে ইউরেনিয়াম-থোরিয়াম-লেড ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে ইউরেনিয়াম-২৩৮, ইউরেনিয়াম-২৩৫ এবং থোরিয়াম-২৩২ আইসোটোপের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়। এগুলো স্থিতিশীল লেডে রূপান্তরিত হওয়ার আগে বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষয় হয়। এই আইসোটোপগুলোর হাফ-লাইফ কয়েক দিন থেকে শুরু করে কয়েক বিলিয়ন বছর পর্যন্ত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই আইসোটোপগুলোর অনুপাত পরিমাপ করে বস্তুটির বয়স নির্ধারণ করেন।
এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া ৪.৪ বিলিয়ন বছরের পুরোনো জিরকন ক্রিস্টালের বয়স নির্ধারণ করতে পেরেছেন। এছাড়াও লুমিনেসেন্স ডেটিং পদ্ধতিও রয়েছে, যা একটি বস্তুর শেষবার আলো বা তাপে উন্মুক্ত হওয়ার সময় নির্ধারণ করে। এই পদ্ধতি ভূ-বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেন ভূপ্রাকৃতিক পরিবর্তন সম্পর্কে জানার জন্য।
পাথর বা তলানিতে থাকা খনিজ পদার্থ যখন মাটিতে চাপা পড়ে, তখন আশেপাশের তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণে এগুলোর ইলেকট্রন স্থানচ্যুত হয়। পরবর্তীতে আলো বা তাপের সংস্পর্শে এলে ইলেকট্রনগুলো মূল অবস্থানে ফিরে আসতে থাকে এবং আলো বা তাপ নিঃসরণ করে। বিজ্ঞানীরা এই আলো পরিমাপ করে বস্তুটি কতদিন মাটির নিচে ছিল তা নির্ধারণ করেন। বস্তু বা প্রাচীন ইতিহাস নির্ধারণ ছাড়াও এই পদ্ধতিগুলো বিভিন্ন অপরাধ তদন্ত এবং শিল্পকর্মের সত্যতা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। এমনকি পুরোনো ওয়াইন বা হুইস্কির বয়স জানার জন্যও এটি কাজে লাগে বলে জানিয়েছেন হাইয়াম।
✍️ Imam Hossain Anjir
Team Science and Experiment
No comments:
Post a Comment